খালি পেটে শসা খেলে কি উপকার পাওয়া যায়-শসা খাওয়ার উপকারিতা এবং অপকারিতা
ফাইবার ,পটাশিয়াম , ম্যাগনেসিয়াম , ভিটামিন এ । ভিটামিন সি এবং কে সমৃদ্ধ শসা হচ্ছে একটি পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ সবজি । এই পোস্টের মাধ্যমে আমরা জানবো খালি পেটে শসা খেলে কি উপকার পাওয়া যায় -শসা খাওয়ার উপকারিতা এবং অপকারিতা ।
আমরা অনেকেই এই সবজিটির সঙ্গে পরিচিত । এছাড়াও প্রতিনিয়ত আমরা এই সবজিতে খেয়ে থাকি কিন্তু এর কার্যকারিতার দিকগুলো আমাদের সকলেরই অজানা । চলুন জেনে নেই শসার প্রয়োজনীয় দিকগুলো ।
পোস্ট সূচিপত্রঃ
- শসার উপকারিতা
- শসা খাওয়ার অপকারিতা
- খালি পেটে শসা খেলে কি উপকার পাওয়া যায়
- শসার পুষ্টিগুণ
- কখন শসা খাওয়া ক্ষতিকর
শসার উপকারিতা
সাধারণত আমাদের নিয়মিত খাদ্য তালিকায় শসা থাকে । অনেকে আবার রান্নার মধ্যে সবজি হিসেবে এটি ব্যবহার করে । প্রতিনিয়ত আমরা শসা খেয়ে থাকলেও শসার গুণাগুণ দিকগুলো সকলেরই অজানা । শসা মধ্যে যে পানি থাকে সেটি আমাদের শরীরের বর্জ্য এবং বিষাক্ত পদার্থ অপসারণে অনেকটা সাহায্য করে থাকে । নিয়মিত শসা খেলে কিডনিতে সৃষ্ট পাথরও গোলে যায় । তাই আমাদের সকলের উচিত নিয়মিত শসা খাওয়া ।
এছাড়া নিয়মিত শসা খেলে এটি ওজন কমাতেও বিশেষ ভূমিকা রাখে । চোখের জ্যোতি বাড়াতে এবং ছানি পড়া থেকে মুক্তির জন্য শসা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । আবার শসা ডায়াবেটিস থেকে মুক্তি দেয় । কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে শসা বিশেষভাবে কাজ করে।
চলুন জেনে নেই শসার আরো কিছু উপকারী দিকঃ
- দেহের পানি শূন্যতা দূর করে
- দেহের বাইরের এবং ভিতরের তাপ নিয়ন্ত্রণ করে
- দেহে জমে থাকা বিষাক্ত পদার্থ দূর করে
- চুল ও নখ সতেজ রাখে
- কিডনি সুস্থ থাকে
- চোখের জ্যোতি বাড়ায়
- ওজন কমাতে সাহায্য করে।
- মাথা ব্যথা থেকে নিষ্কৃতি দেয়
- ক্যান্সার প্রতিরোধ করে
- মুখের অভ্যন্তরীণ জীবাণু ধ্বংস করে
- শরীর হাইড্রেট রাখে
- ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে
- হজমশক্তি উন্নত করে
- দৃষ্টিশক্তি উন্নত করে শসা
- কোলেস্ট্রলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে
- মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য ভালো রাখে
- মানসিক চাপ কমাতে পারে
- টক্সিন বের করতে সাহায্য করে
- ত্বক উন্নত করে
- জয়েন্টের ব্যথা কমায়
শসা খাওয়ার অপকারিতা
শসা একটি আদর্শ সবজি । একটি গ্রীষ্মকালে হলেও সারা বছরব্যাপী পাওয়া যায় । যদিও আমাদের অনেকের মধ্যেই শসাকে সবজি হিসেবে দেখিনা অনেকে ফল হিসেবেও দেখে থাকি । শসাতে ক্যালরি খুব কম পরিমাণে থাকে। এতে পানির পরিমাণ বেশি থাকে, ভিটামিন সি, এ, পটাশিয়াম ছাড়াও নানা রকম পুষ্টিগুণ রয়েছে । তারপরও অতিরিক্ত কিছু আমাদের শরীরের জন্য ভালো নয়। অতিরিক্ত পরিমাণে শসা খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকারক । শসা বেশি পরিমাণে খেলে শরীরে টক্সিনের মাত্রা বৃদ্ধি পায় ।
এছাড়াও শসাতে প্রচুর পরিমাণে পানি রয়েছে। তৃষ্ণা মেটানোর জন্য অনেকেই আমরা বাহিরে শসা খেয়ে থাকি । কারণ এতে অনেকটাই পানি পিপাসা মিটে যায় । অধিক পরিমাণে শসা খেলে শরীরের তরলের ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি হয় । এতে ইউরোনের পরিমাণ বেড়ে যায় ও শরীরের পানির পরিমাণ কমে যায়। সেই সঙ্গে যারা এসিডিটি সমস্যায় ভুগছেন তাদের এসিডিটির মাত্রা বেড়ে যেতে পারে । এছাড়াও এসিডিটি না থাকলে শসা বেশি পরিমাণে খেলে পেট ফুলে পেটে গ্যাসের সৃষ্টি হতে পারে ।
এই ধরনের নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে । তাই যারা এসিডিটি সমস্যায় ভুগছেন তারা অতিরিক্ত পরিমাণে শসা খাবেন না । যাদের শ্বাসতন্ত্রের সমস্যা রয়েছে তাদের শসা খাওয়া উচিত নয় । এছাড়া শসাতে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম রয়েছে যা কিডনির কাজকে ব্যাহত করে। দীর্ঘদিন অতিরিক্ত শসা খাওয়া কিডনির জন্য ঝুঁকিপূর্ণ । তাই যাদের কিডনি সমস্যা রয়েছে তাদের অতিরিক্ত শসা খাওয়া ঠিক নয়। কারণ এতে করে কিডনিতে পাথর জমার ঝুঁকি সৃষ্টি হতে পারে। অধিক পরিমাণে শসা খেলে অনেকেরই পায়ে পানি জমে যায় । শসা খেলে পেট ফুলে যায় ফলে অন্যান্য খাবার খাওয়ার চাহিদা কমে যায় ।
শসা খাওয়ার কিছু অপকারিতা দিকঃ
- অতিরিক্ত পরিমাণে শসা খেলে হজমের সমস্যা হতে পারে
- ইলেকট্রোলাইট ভারসাম নষ্ট করতে পারে
- এলার্জি ঝুঁকি থাকতে পারে
- পেট ফাঁপা বা অস্থিরতা তৈরি করতে পারে
- ঠান্ডা জনিত সমস্যা বাড়াতে পারে
খালি পেটে শসা খেলে কি উপকার পাওয়া যায়
খালি পেটে শসা খাওয়ার রয়েছে বিভিন্ন উপকার। শসাতে রয়েছে দ্রবনীয় আঁশ ও পানি এটি বদহজম শক্তি বৃদ্ধি করে । সকালে খালি পেটে শসা খেলে দেহের বিভিন্ন ধরনের বিষাক্ত পদার্থ দূর করতে সাহায্য করে । এছাড়াও এটি প্রত্যাহীক ভিটামিনের শূন্যতা পূরণ করে । খালি পেটে শসা খেলে শরীরের ইউরিক এসিডের মাত্রা ঠিক থাকে ।
এছাড়া শরীরে অতিরিক্ত টক্সিন বের করে দিতে শসা বিশেষভাবে কাজ করে । দেহের বিভিন্ন পুষ্টি জনিত সমস্যা পূরণ করতে শসার ভূমিকা অপরিসীম । এছাড়াও শসা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে বিশেষভাবে কাজ করে । এটি ত্বক বান্ধব খনিজের ভালো উৎস । তাই আমাদের সকলের উচিত পর্যাপ্ত পরিমাণে শসা খাওয়া ।
শসার পুষ্টিগুণ
আমরা অনেকেই শসা কে সবজি অথবা ফল হিসেবে খেয়ে থাকি । অনেকে রান্নায় কিংবা খাবারের সাথে বিভিন্ন সালাদের সঙ্গে ব্যবহার করেও খেয়ে থাকে । শসা তে পুষ্টি গুণের পরিমাণ রয়েছে অধিক । দুর্গন্ধযুক্ত সংক্রমণে আক্রান্ত মাড়ি সমস্যায় শসা ভীষণ উপকারী । এছাড়াও পর্যাপ্ত পরিমাণে শসা খেলে জরায়ু , স্তন ও মূত্রগ্রন্থিসহ বিভিন্ন স্তনের ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায় । থাকা সালফার ও সিলিকা চুলের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
এছাড়াও শসা গেটের ব্যথা থেকে মুক্তি প্রদান করে । শসাতে বিদ্যমান পটাশিয়াম , ফাইবার ভিটামিন এ , ভিটামিন সি , পটাশিয়াম , ম্যাগনেসিয়াম ইত্যাদি পুষ্টিগুণ গুলো শরীরের বিভিন্ন চাহিদা পূরণে বিশেষভাবে কাজ করে । এছাড়াও শরীরকে সুস্থ এবং সবল রাখে । কেটে রাখা শসা চোখে নিচে দিলে চোখের কালো দাগ দূর হয় ।শসাতে রয়েছে ৩.৬ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট , ০.৬ গ্রাম প্রোটিন ,০.৫ গ্রাম ফাইবার ,১.৭ গ্রাম চিনি,১৫ ক্যালারি ,০.১ গ্রাম ফ্যাট ।
কখন শসা খাওয়া ক্ষতিকর
আমাদের মধ্যে অনেকেই ভুল সময় শসা খেয়ে থাকে পুষ্টিবিদের মতে ভুল সময়ে এটি খেলে উপকারের বদলে ক্ষতি হতে পারে । প্রশ্ন হচ্ছে তাহলে কখন শসা খাওয়া ক্ষতিকর? স্বাস্থ্যবিজ্ঞানদের মতে উপকারী হলেও রাতের বেলায় শসা খাওয়া একদম উচিত নয় । এতে শরীরে নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে ।
শসাতে আছে এক ধরনের উপাদান যেটি আমাদের হজম শক্তিকে শক্তিশালী করে । তাই রাতে শসা খেলে হজম হওয়ার সুযোগ থাকে না কারণ খাওয়ার কিছুক্ষণ পর সবাই ঘুমিয়ে পড়ে । রাতে শসা খেলে পেট বারি হতে শুরু করে ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য বদহজম সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই রাতে শসা খাবেন না । শসা খেলে ঘুম না আসার কারণ হতে পারে । রাতের বেলায় শসা খেলে শুয়ে পড়লেও ঘুম আসে না । অস্থিরতার সৃষ্টি হয় । হজমেও সমস্যা হয় । এর ফলে পেটে গ্যাসের সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
শেষ কথা
আমাদের সকলের উচিত প্রয়োজনীয় পরিমাণে শসা খাওয়া ।এটি আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী একটি খাবার । আমরা এই পোস্টের মাধ্যমে খালি পেটে শসা খেলে কি উপকার পাওয়া যায় এবং শসা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জেনেছি ।শেষ পর্যন্ত দেখার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ । পরবর্তী এরকম আরো আর্টিকেল পেতে ব্লগার ওয়েবসাইটের পাশে থাকুন ।
মিম ব্লগার আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন।প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url