ওজন কমাতে করনীয় কার্যাবলী -ওজন কমানোর দারুণ আইডিয়া
বর্তমানে অধিকাংশ মানুষ ওজন বৃদ্ধি জনিত সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে ।মানুষের মধ্যে এটি একটি চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আজ আমরা ওজন কমানোর করনীয় কার্যাবলী সম্পর্কে আলোচনা করব । কিভাবে এই সমস্যার সম্মুখীন করা যায় চলুন জেনে নেই ।
পৃথিবীর প্রায় অনেক মানুষই আছে যারা এই সমস্যায় ভুগছে । মূলত ওজন বৃদ্ধি হচ্ছে প্রচুর ক্যালারি যুক্ত খাবার খাওয়ার কারনে।তাই সকলের উচিত কম ক্যালারি যুক্ত খাবার খাওয়া ।এই ওজন বৃদ্ধির ফলে বিভিন্ন ধরনের রোগের সম্মুখীন হতে হয়। যেমনঃ ফ্যাটি লিভার , অ্যাসিডিটি , ডিস্পেন্সিয়া এবং বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার ইত্যাদি ।
পোস্ট সূচপত্রঃ
- কিভাবে ওজন কমাতে হবে
- ওজন কমাতে রাতের খাবারের গুরুত্ব
- কি ধরনের খাবার খেলে ওজন কমবে
- ঘরোয়া পদ্ধতিতে কিভাবে ওজন কমানো যাবে
- ওজন কমাতে কেমন নিয়ম অনুসরণ করতে হবে
কিভাবে ওজন কমাতে হবে
সাধারণত ওজন বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হচ্ছে অধিক ক্যালরিযুক্ত খাবার। আমরা অনেকেই জানিনা যে আমাদের শরীরে ওজন বৃদ্ধির জন্য প্রচুর পরিমাণে ক্যালানি যুক্ত খাবার বিশেষ ভূমিকা রাখে । তাই সবার আগে আমাদের সেই সকল খাবারকে চিহ্নিত করতে হবে যে সকল খাবারে অধিক পরিমাণে ক্যালরি পাওয়া যায় । আমরা দৈনন্দিন জীবনযাপনের জন্য বিভিন্ন ধরনের খাবার খেয়ে থাকি । কিন্তু কোন খাবার আমাদের সাথে জন্য ভালো এবং কোন খাবার আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর সে সম্পর্কে আমাদের সকলেরই অজানা । সর্বপ্রথম ওজন কমানোর জন্য আমাদের নিজেদের খাবারের দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
আমরা অনেকেই ওজন কমানোর জন্য বিভিন্ন ধরনের পদ্ধতি অবলম্বন করে থাকি এবং চাই যাতে খুব তাড়াতাড়ি বা কম সময়ের ভিতরেই ওজন কমানো যায় কিন্তু আমাদের সকলেরই উচিত তাড়াহুড়ো না করে সময় নিয়ে ওজন কমানো । আমরা ওজন কমানোর জন্য ব্যায়াম করে থাকি কিন্তু ব্যায়ামের থেকেও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে খাবারের দিকে নজর দেওয়া এবং খাবারের পরিমাণ কমিয়ে ফেলা । এছাড়াও বাহিরের বিভিন্ন খাবার যেমন চিপস চকলেট কোলড্রিঙ্ক কফি ইত্যাদি সকল খাবার বন্ধ করতে হবে কারণ এই সকল খাবার অধিক পরিমাণ ক্যালরি বহন করে । দোকানে কেনা খাবার বন্ধ করলেই আপনি আপনার শরীরে পরিবর্তন দেখতে পারবেন । চেষ্টা করতে হবে বাড়ি তৈরি হেলদি খাবার গ্রহণ করা । কারণ বাড়ির খাবারের পরিমাণ কম থাকে । তবে বাড়িতে বৃদ্ধ মানুষ সকল খাবারের মধ্যে আলু , কার্বোহাইড্রেট জনিত খাবার এবং ভাতের পরিমাণ কম রাখতে হবে। কারণ এসব খাবারের প্রচুর ক্যালরি থাকে ।
ওজন কমানোর ক্ষেত্রে কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস রয়েছে। চলুন জেনে নেই সেগুলো কি কিঃ
- ওজন কমানোর জন্য মধু, লেবু কিংবা আদার রস গরম পানির সাথে মিশিয়ে খেতে পারে এটি ওজন কমাতে সাহায্য করে।
- বাইরের খাবার সম্পূর্ণভাবে বন্ধ রাখতে হবে ।
- খাবারের মধ্যে গ্রিন টি যোগ করতে পারেন কারণ গ্রিন টি তে রয়েছে পাওয়ারফুল অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যেটি ওজন কমাতে বিশেষ ভূমিকা রাখে । সারাদিনের মধ্যে এটি ২/৩ বার খেতে পারেন ।
- ওজন কমানোর ক্ষেত্রে অস্বাস্থ্যজনিত খাবার বাদ দিয়ে পর্যাপ্ত পরিমাণে ফল ও শাকসবজি খেতে হবে ।
- অধিক মিষ্টি জনিত খাবার ত্যাগ করতে হবে মানে যে সকল খাবারে চিনির পরিমাণ বেশি রয়েছে সে সকল খাবার থেকে বিরত থাকতে হবে । কারণ এই ধরনের খাবারেও অধিক ক্যালরি পাওয়া যায় ।
ওজন কমাতে রাতের খাবারের গুরুত্ব
ওজন কমাতে করণীয় কার্যাবলী গুলোর মধ্যে আরেকটি হচ্ছে রাতের খাবারের পরিমাণ । আমাদের মধ্যে অনেকেই জানিনা যে ওজন কমাতে রাতের খাবারের পরিমাণ কতটুকু প্রয়োজন। ওজন কমানোর জন্য অনেকেই আছে ডায়েটের মধ্যে থাকে কিন্তু এতে কোন উপকার পাওয়া যায় না। যদি তিন বেলার ভিতরে দুই বেলা কিংবা এক বেলা খাবারে ডায়েটে থাকা হয় সে ক্ষেত্রেও কোন লাভ দেখা যায় না কারণ আমাদের মধ্যে অনেকেই আছে যারা সারাদিন ডায়েট করে শুধু এক বেলা খাবার খা। এতে করে সারাদিন খাবারের যে চাহিদাটা তার এক বেলাতেই পূরণ হয়ে যায়। অর্থাৎ সারাদিন না খেয়ে থাকলে সে ক্ষুধার চাহিদাটা এক বেলায় খাবারের পরিমাণ বেশি থাকে যা অধিক ক্যালারি বহন করে ।
আজকে আমাদের সকলেরই উচিত খাদ্য তালিকা স্বাস্থ্যকর রাখা। তবে ওজন কমাতে রাতের খাবারের পরিমাণ গুরুত্বপূর্ণ। সারাদিনের খাবারের যে শক্তি তার সারা দিনের কাজই ব্যবহৃত হয় কিন্তু রাতে দেরিতে খাওয়ার ফলে এবং অতিরিক্ত বেশি খেয়ে সাথে সাথে ঘুমিয়ে পড়লে সে সকল খাবার হজম হয়ে শক্তির রূপান্তরিত না হয়ে ক্যালারিতে রূপান্তর হয় । তাই রাতে খাবারের পরিমাণ কমিয়ে দিতে হবে তবে এর পাশাপাশি রাতে আরেকটি খাবার যোগ করা যায় । সেটি হচ্ছে এক গ্লাস পানিতে চিয়া সিড পরিমাণমতো দিয়ে ভিজিয়ে রেখে সেটি রাতে পান করে ঘুমালে ওজন কমে যায় । এই খাবারটি রাতে খেলেই বেশি উপকারী এবং ওজন কমাতে ভূমিকা রাখে ।
কি ধরনের খাবার খেলে ওজন কমবে
ওজন কমাতে হলে সর্বপ্রথম আমাদের খাদ্য তালিকায় সুষম খাদ্য রাখতে হবে । কারণ আমাদের শরীর কে কর্মক্ষম রাখতে সাহায্য করে । মূলত ওজন কমাতে খাবারের দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে ।পাশাপাশি কম ক্যালারি যুক্ত খাবার গ্রহণ করতে হবে ।চলুন এমন কিছু খাবারের নাম জানি যেগুলোতে ক্যালারির পরিমাণ কম এবংসুষম খাদ্য সম্পন্নঃ
- শসা
- মুলা
- বাঁধাকপি
- মাশরুম
- তরমুজ
- পালনশাক
- টমেটো
- লাউ
- শালগম
- জাম্বুরা
- গাজর
- মটরশুঁটি
- আপেল
- লেটুস
- টক জাতীয় ফল
- এলোভেরা
- গ্রিনটি
- আমলকী
- পেঁপে
- কমলা
ঘরোয়া পদ্ধতিতে কিভাবে ওজন কমানো যাবে
ঘরোয়া পদ্ধতিতে কিভাবে ওজন কমানোর জন্য সবার আগে যেটা করতে হবে তা হচ্ছে বাহিরের খাবার পরহার করা ।কারন ওজন কমাতে ঘরোয়া পদ্ধতি মেনে আবার বাহিরের খাবার গ্রহণ করলে এতে কোন ফল পাওয়া যাবে না। ঘরে বিদ্যমান সকল স্বাস্থ্যসম্মত খাবার এবং স্বল্প ক্যালরিযুক্ত খাবার খেতে হবে । যেমন সকালে লেবু পানিযুক্ত ড্রিঙ্ক খেতে পারেন পাশাপাশি টক জাতীয় খাবারও খেতে পারেন এগুলো ওজন কমাতে কার্যকরী ।
তবে ঘরে বিদ্যমান আলু এবং ভাত যথাসম্ভব কম খাওয়াই ভালো এর পরিবর্তে হাফ প্লেটের মতো লাল চালের ভাত কিংবা লাল চালের পাতলা রুটি করে ও খেতে পারেন । এর পাশাপাশি লেবু জিরার শরবত করেও খেতে পারেন এটি খুবই উপকারী অথবা ডিটক্স ওয়াটার ও খেতে পারেন । এছাড়াও তিন বেলা খাবারের মধ্যে সুষম খাদ্য রাখতে হবে অর্থাৎ শাকসবজি কম ক্যালরিযুক্ত খাবার রাখতে হবে । আবার চাইলে টক জাতীয় খাবারের মধ্যে টক দই খেতে পারেন । এগুলো ওজন কমাতে সাহায্য করে। তবে দুধ, ই- সব বলের ভুষি ,লেবু দিয়ে শরবত কিংবা লেবু জিরার শরবত এমন পানিও পান করতে হবে চিনি দেওয়া ছাড়া । এগুলো ওজন কমানোর ক্ষেত্রে বিশেষভাবে কাজ করে । অন্যদিকে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি , ফল এবং সুষম খাদ্য সম্পন্ন খাবার গ্রহণ করতে হবে ।
ওজন কমাতে কেমন নিয়ম অনুসরণ করতে হবে
সাধারণত ওজন কমানোর ক্ষেত্রে আমরা বিভিন্ন ধরনের নিয়ম অনুসরণ করে থাকি । তবে এতগুলো নিয়ম অনুসরণ না করে নিজেদের খাদ্য তালিকা ঠিক রাখলে খুব সহজ উপায়ে এই ওজন কমানো যায়। যেমনঃ সকালে খালি পেটে লেবুর শরবত কিংবা টক জাতীয় খাবার খেতে পারে: এর কিছুক্ষণ পরেই সকালের খাবার খেয়ে নিতে পারেন যাতে সে সকালের খাবারের মধ্যে প্রোটিন , কার্বোহাইড্রেট যুক্ত থাকে । তারপর দুপুরের খাবারের আর সকালের খাবারের মাঝে কিছু ফল ও গ্রহণ করতে পারেন । অন্যদিকে দুপুরের খাবার কম ক্যালরি জাতীয় করতে পারেন যেমন ঃ অল্প পরিমাণে লাল চালের ভাত , কম ক্যালরিযুক্ত শাকসবজি , সামান্য পরিমাণে স্যালাত কিংবা লাল চালের রুটি, বা সবজিও রাখতে পারেন তবে চাইলে অল্প পরিমাণে ডাল, এক পিস মাছ ও রাখতে পারে ।
বিকেলে চাইলে বাদাম , গ্রিন টি কিংবা ব্লাক কফি খেতে পারেন ।তারপর চলে যাই রাতের খাবার, চেষ্টা করতে হবে রাতের খাবার খুব তাড়াতাড়ি খেয়ে ফেলা আর সকাল এবং দুপুরের খাবার থেকে রাতের খাবার স্বল্প পরিমাণে গ্রহণ করা । রাতে খাবারের পাশাপাশি একগ্লাস চিয়া সিডও খেতে পারেন ।আশাকরি নিয়ম মতো চললে সহজেই ওজন কমানো যাবে ।
শেষ কথা
আমরা এই পোস্টটির মাধ্যমে ওজন কমাতে করণীয় কার্যাবলী সম্পর্কে আলোচনা করেছি পাশাপাশি ওজন কমানোর দারুন কিছু আইডিয়া দেওয়ার চেষ্টা করেছি। এতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের পাশে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ । আশা করি উপরোক্ত যেই কার্যাবলী গুলো আছে সেগুলো ঠিকঠাক নিয়ম মত পালন করলে ইনশাআল্লাহ আপনাদের ওজন কমবে । পরবর্তী পোস্ট পেতে আমাদের পাশেই থাকুন ধন্যবাদ ।
মিম ব্লগার আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন।প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url